সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নাঈমুল হককে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ২২ জুন মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজ একিউএম নাছির উদ্দিন এ রায় প্রদান করলেও ২৫ জুন বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এর আগে গত ২০ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই রায় দেন। রবিবার (২৫জুন) বিকেলে সিলেটে দুদকের মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আলী মর্তুজা কিবরিয়া জানান, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও রেজিস্ট্রারসহ বেশ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের তদন্ত করছে দুদক। প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এই অবস্থায় তারা দু’জন দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। ফলে দুদকের পক্ষ থেকে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেছেন। ২০১৮ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টিতে দেশের চতুর্থ সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেলে নগরীর চৌহাট্টায় সিভিল সার্জন কার্যালয় সংলগ্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও নবীগঞ্জ-বাহুবল নির্বাচনী এলাকার এমপি মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজীর ভগ্নিপতি ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে প্রথম ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) নাঈমুল হক। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ভিসি ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, ইউজিসির অনুমোদিত পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়। এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভিসি ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অর্থের বিনিময়ে দেড় শতাধিক অ্যাডহক নিয়োগ দেন। সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রমের দিকে মনোযোগ না দিয়ে শীর্ষ দুই কর্মকর্তা অনিয়ম-দুর্নীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠন করলে তাতে ভিসি ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এরপর দুদক সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। এছাড়া সিলেট মেডিকেল বিশ^ বিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ (মিলাদ গাজী)। ইউজিসির তদন্তে অনেক সিন্ডিকেট সদস্যও ফেসেঁ যেতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারনে শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগ করা হলো না প্রাক্তন ভিসি ও রেজিষ্ট্রারের। এ নিয়ে সিলেটসহ হবিগঞ্জ জেলা জুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে।